করোনা মোকাবিলায় কঠোর লকডাউন চেয়ে সাত দফা সুপারিশ করেছে বিএনপি।
শনিবার (১৩ জুন) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে এ সুপরিশ তুলে ধরেন।
সুপারিশমালা তুলে ধরার আগে বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কেউ যদি মুখ খোলে তাহলে দেয়া হয় মামলা, রাখা হয় কারাগারে।শুধুমাত্র করোনা নিয়ে তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ৬ জুন পর্যন্ত ৮৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতার মেয়েকে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনা বিষয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর প্রকাশ করার অভিযোগে সাংবাদিকসহ ৪৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। করোনার এ দুর্যোগেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে মানুষের মুখ বন্ধ করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনায় মারা যাওয়ার সংখ্যার সঙ্গে বেসরকারি বা অন্য হিসেবে এ সংখ্যা মিলছে না। ইতিমধ্যে লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট টাইমস আইইডিসিআরের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যাতে শুধু ঢাকাতেই করোনা আক্রান্ত রয়েছে সাড়ে সাত লাখের বেশি। এ পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অচিরেই ভয়াবহ রূপ নেবে।
ফখরুল বলেন, যে দেশে চিকিৎসা সেবায় বৈষম্য বিরাজ করছে। গরীব মানুষ হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা পাচ্ছে না। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা রাস্তায় মারা যাচ্ছে। একটি আইসিউ, একটি ভেন্টিলেটর বা একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার এখন সোনার হরিণ। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেয়।যখন শুনি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হাসপাতাল হাসপাতালে আইসিউ বেড বুকিং দিয়ে রেখেছেন। অনেককে দেখা গেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ভালো হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থাগুলো সাধারণ মানুষের জন্য নেই কেন? দুভার্গজনক হলেও সত্য দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত সিলেটের ডা. মইন উদ্দিন চিকিৎসার জন্য একটি আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স পাননি। তিনি প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সড়কে, যানবাহনে, অ্যাম্বুলেন্সে, মর্গে এখন শুধু লাশের সারি। কিন্তু সবার চিকিৎসা সুনিশ্চিত করাতো সরকারেরই দায়িত্ব। কিন্তু সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির করোনা পর্যবক্ষেণ সেলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহামুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন যুক্ত ছিলেন।
বিএনপির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
১. প্রয়োজনে সারাদেশে/ এলাকা ভিত্তিক কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের পর্যাপ্ত মানসম্মত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. প্রত্যেক জেলায় করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসাসেবা দ্রুত সম্প্রসারিত করতে হবে।
৪. অভাবগ্রস্ত পরিবারে রেশন কার্ডের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি গার্মেন্টস কর্মী ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের আর্থিক সুবিধা ও সুচিকিৎসা প্রদান এবং খাদ্য সহায়তা দিতে হবে।
৬. সরকারি ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ভালো না। করোনা দুর্যোগেও সরকার দলীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের লুটের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে সঠিকভাবে পালন হবে বলে আমরা মনে করি। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এতে উপকৃত হবে।
৭. আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা উপস্থাপন করতে হবে। তথ্য লুকিয়ে মেকি সফলতা দেখানোর প্রবণতা জনগণের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।